মোঃ মনিরুল ইসলাম, ব্যুরো প্রধান,নাচোল: (নাচোল, গোমস্তাপুর ও ভোলাহাট) তিন উপজেলা নিয়ে গঠিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ সংসদীয় আসন। প্রায় ২৫বছর ধরে এ আসনটি ছিল বিএনপির দখলে। কিন্তু ২০০৮সালের নির্বাচনে বিএনপির দুর্গে আঘাত হানে আওয়ামী লীগ।২৫ বছর ধরে রাখা বিএনপির প্রার্থী সৈয়দ মঞ্জুর হোসেনকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের মু. জিয়াউর রহমান। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত গোলাম মোস্তফা বিশ্বাস স্বতন্ত্র প্রার্থী খুরশিদ আলম বাচ্চুকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরপর ১০বছর এই আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে থাকার পর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী জিয়াউর রহমান কে পরাজিত করে বিএনপির আলহাজ্ব আমিনুল ইসলাম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে আসনটি আওয়ামী লীগের কাছ থেকে হাতছাড়া হয়। একাদশ নির্বাচনে পরাজিত হয়েও দমে যাননি আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট দুই নেতা জিয়াউর রহমান ও গোলাম মোস্তফা বিশ্বাস। সরকারের উন্নয়ন মূলক কাজের পাশাপাশি তারা নিজেদের ক্ষমতাকালের উন্নয়ন মূলক কাজ নিয়ে এলাকার সাধারণ মানুষের দ্বারে দ্বারে কর্মীদের নিয়ে সরব ছিলেন। এবং বর্তমানে আছেন এই দুই নেতা। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে দলীয় সিদ্ধান্তের কারণে বিএনপির সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আমিনুল ইসলাম পদত্যাগ করলে এই আসনটি শূন্য হয়। বিএনপির সংসদ সদস্যের পদত্যাগর সঙ্গে সঙ্গেই উপ-নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়ে যায়। ১ ফেব্রুয়ারি উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়ে আসনটি পুনরুদ্ধার করেন তৎকালীন জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জিয়াউর রহমান। বর্তমান চলতি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বেশ কয়েকজন প্রার্থীর নাম শোনা গেলেও মূলত দুই হেভিওয়েট প্রার্থী সংসদ সদস্য জিয়াউর রহমান এবং সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মোস্তফা বিশ্বাস সংসদীয় আসনের আনাচেকানাচে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে উন্নয়ন মূলক কর্মকান্ড তুলে ধরে প্রচার প্রচারণার মাধ্যমে ভোট প্রার্থনা করে বেড়াচ্ছেন।
এবার আওয়ামী লীগ দলের নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন জিয়াউর রহমান। দলের মনোনয়ন পাননি গোমস্তাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম মোস্তফা বিশ্বাস। তিনি এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নৌকা প্রতিকের বিপরীতে স্বতন্ত্র হয়ে ঈগল প্রতিক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে ৫জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতিকের প্রার্থী মু. জিয়াউর রহমান, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঈগল প্রতীকের গোলাম মোস্তফা বিশ্বাস, ডাব প্রতিকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল্লাহ মামুন আর রশীদ জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের আব্দুর রশিদ ও বিএন এফ এর টেলিভিশন প্রতীক।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে দিনভর প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকার প্রার্থী জিয়াউর রহমান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগল প্রতিকের গোলাম মোস্তফা বিশ্বাস। কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। তবে ভোটাররা বলছেন, লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি। যতদিন যাচ্ছে ততই দুই প্রার্থীর প্রভাব বাড়ছে বলে ধারণা করছেন দুই দলের সমর্থকরা। উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দরা বেশির ভাগই নৌকা প্রতীকের ভোট করছেন। এদিকে আবার স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম মোস্তফা বিশ্বাস এর দিকে আওয়ামী লীগ দলীয় পোষ্টের নেতারা কম থাকলেও সাধারণ ভোটাররা ঈগল প্রতীকের পক্ষ নিয়ে মাঠে জোরালো ভাবে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। তবে নিজস্ব সমর্থকদের নিয়ে জোর নির্বাচনি প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন নিজ নিজ প্রার্থীরা।
তিন উপজেলার জনসাধারণ ভোটারদের দাবি, বর্তমান সরকারের সময় উন্নয়ন ভালো হয়েছে। পদ্মাসেতু, রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ নির্মাণও হয়েছে। এছাড়াও এই উপজেলায় বিদ্যুতও আছে। ১০ বছর আগেও সবার ঘরে ঘরে ছিল না বিদ্যুত। যে প্রার্থী জিতুক না কেন এই উন্নয়ন যেন অব্যাহত থাকে আশা ব্যক্ত করেন তারা।
(নাচোল গোমস্তাপুর ও ভোলাহাট) তিন উপজেলার বিভিন্ন বাজারে ও গ্রামের চায়ের দোকান কিংবা রাস্তার মাঝেও নির্বাচন নিয়ে আলোচনামুখর স্থানীয়রা। কে জিতবে ভোটে তা নিয়ে চলছে তর্ক-বিতর্ক ও নানান রকম সমালোচনা। তবে এই উপজেলা গুলোর প্রধান কাজই হচ্ছে কৃষি। চায়ের দোকানের আড্ডায় মানুষরা বলছেন, এবার কৃষিখাতকে গুরুত্ব দিলে আরও ভালো হবে। সেই সাথে ভাঙতে হবে বাজার সিন্ডিকেট। এই আসন থেকে কে জিতবে তা নিয়ে জোরালো মাথা ব্যথা নেই ভোটারদের। তবে তাদের প্রত্যাশা সরকার যেন এবার কৃষিখাতকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়। যেই জিতুক কৃষকদের পাশে থাকে যেন এখানকার সংসদ সদস্য।
তবে এসব বিষয় নিয়ে কথা বলার জন্য সংসদ সদস্য জিয়াউর রহমান এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে, তার পার্সনাল একজন ব্যক্তিগত লোক ফোন রিসিভ করে বলেন এমপি গণসংযোগ নিয়ে ব্যস্ত আছেন। উনার সাথে সরাসরি কথা বলতে হলে রাতে তার রহনপুর কার্যালয়ে আসতে হবে। স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম মোস্তফা বিশ্বাস এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান আমি এমপি মনোনিত হলে সংসদীয় এলাকার রাস্তাঘাট, শিক্ষার মান উন্নয়ন, বিদ্যুৎ, পানির ব্যবস্থাপনা, ব্রীজ, কালভার্ট, প্রটেকশন অল ইত্যাদি উন্নয়ন করবো। তবে যেসব অসহায় গরীব দুঃখী মানুষ তাদের নায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত রয়েছেন, তাদেরকে অগ্রাধিকার আগে দেব।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে তিনটি উপজেলা, ১৬টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভা মিলে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৩১ হাজার ৭১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ১৪ হাজার ৩৫৬ জন ও মহিলা ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ১৬ হাজার ৭১৫ জন। ভোট কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮২টি, নতুন ভোট কেন্দ্র ২৩টি এবং ভোটকক্ষ ৯৯৩টি ও অস্থায়ী ভোটকক্ষ ৩৩টি।