মোঃ মনিরুল ইসলাম, নাচোল: তেভাগা আন্দোলনের কিংবদন্তি নেত্রী, নারীমুক্তি ও কৃষক অধিকার আন্দোলনের পথিকৃৎ বিপ্লবী রাণী ইলা মিত্রের ২৩তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়েছে।
সোমবার (১৩ অক্টোবর) সকালে উপজেলার নেজামপুর ইউনিয়নের রাওতাড়া গ্রামে অবস্থিত ‘ইলা মিত্র মট ও সংগ্রহশালা’ প্রাঙ্গণে ‘রাণী ইলা মিত্র স্মৃতি সংসদ’-এর আয়োজনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইলা মিত্র স্মৃতি সংসদের সভাপতি বিধান শিং এবং সঞ্চালনা করেন সমাজসেবক ও সাংবাদিক মনিরুল ইসলাম।অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুলতানা রাজিয়া। তিনি তার বক্তব্যে বলেন “রাণী ইলা মিত্র ছিলেন কৃষক অধিকার ও নারীর মর্যাদার প্রতীক। তাঁর সংগ্রামী জীবন নতুন প্রজন্মকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে অনুপ্রেরণা জোগাবে।” ইলা মিত্র কেবল তেভাগা আন্দোলনের নেত্রী না তিনি ছিলেন ইতিহাসের এক সাহসী নারী যিনি নিপীড়নের মুখেও সত্যের পক্ষে ছিলেন। তাঁর জীবন থেকে শেখার আছে অনেক কিছু। সভায় আরও বক্তব্য দেন দৈনিক গৌড় বাংলা পত্রিকার বার্তা সম্পাদক সাজীদ তৌহিদ, সাংবাদিক জিলানী ও আবুল হোসেন প্রমুখ।আলোচনা সভা শেষে আয়োজন করা হয় কাঙ্গালিভোজের। যেখানে এলাকার শতাধিক মানুষ অংশগ্রহণ করেন।১৯২৫ সালের ১৮ অক্টোবর কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন ইলা মিত্র। ১৯৪৫ সালে তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুরের জমিদার পরিবারের সন্তান রমেন্দ্রনাথ মিত্রের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৪৬ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত নাচোল অঞ্চলে চলা তেভাগা আন্দোলনে তিনি নেতৃত্ব দেন, যেখানে কৃষকরা জমির ফসলের তিন ভাগের দুই ভাগ চাওয়ার ন্যায্য দাবি জানায়। এই আন্দোলনের নেতৃত্বের কারণে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং অকথ্য নির্যাতনের শিকার হতে হয়। তবুও তিনি মাথা নত করেননি। তাঁর দৃঢ়তা ও ত্যাগ তাঁকে করেছে বাংলার নারীর সংগ্রামের এক অমর প্রতীক।
২০০২ সালের ১৩ অক্টোবর এই বিপ্লবী নারী মৃত্যুবরণ করেন। তবে তাঁর আদর্শ ও আন্দোলনের চেতনা আজও নাচোলসহ সমগ্র বাংলাদেশে মানুষের প্রেরণার উৎস হয়ে আছে। “যে নারী নিজের কষ্ট ভুলে অন্যের অধিকারের জন্য লড়েছিলেন, তাঁকে জাতি চিরকাল শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করবে।”
রাণী ইলা মিত্রের সংগ্রামী জীবন ও মানবিক আদর্শ নাচোলবাসীর গর্ব, জাতির প্রেরণা।
