স্টাফ রিপোর্টার: চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ভোলাহাট ও গোমস্তাপুর উপজেলার ফোরামঘাট মহানন্দা নদীর উপর নির্মাণাধীন সেতুর পাশ ঘেঁষে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে নিয়মিত অবাধে বালু উত্তোলন করছেন সেতু নির্মাণকারী ঠিকাদার নিজেই । নির্মাণাধীন সেতুর পাশ ঘেঁষে বালু উত্তোলন করায় ভবিষ্যতে সেতুটি ঝুঁকিতে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সচেতমহল। ছয় মাস পূর্বে একই স্থানে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে ভূগর্ভ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের দায়ে ২২ জানুয়ারি দায়িত্বে থাকা নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট জাকির মুঙ্গী মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে বালু উত্তোলনের বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করেণ। কিন্তু মোবাইল কোর্টে জব্দকৃত বালু উত্তোলন উপকরণ ও স্তুপকৃত বালু নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন ঠিকাদার।
এদিকে মোবাইল কোর্টের সাজা হওয়ার পরেও একই স্থানে গত ২৪ জুলাই থেকে আবারো দুটি ড্রেজার মেশিন দিয়ে ভূগর্ভ থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে প্রায় শত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুটি ঝুঁকির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন সচেতনমহল। বালু উত্তোলনের ফলে হুমকির মুখে পড়বে নির্মাণাধীন সেতু ও নদীর দুই পাশের পাড় ভেঙ্গে আবাদি জমি, বাড়ি-ঘর পাকা স্থাপনাগুলো বিলিন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় শংকিত নদীর তীরের জমির মালিক ও কৃষকেরা।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালে পল্লী সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় গোমস্তাপুর উপজেলার বাঙ্গাবাড়ী ইউনিয়নের ফোরাম ঘাট সড়ক হয়ে ভোলাহাট উপজেলার দলদলী বারইপাড়া সড়কে মহানন্দা নদীর ওপর ৪২৮.৬০ মিটার দীর্ঘ আরসিসি, এআরসিবি, পিএসসি গার্ডার সেতুটির নির্মাণ শুরু হয়। এমএমবিইএল এন্ড এমএমএম জেভি লাইসেন্স ব্যবহার করে কাজটি করছেন ঠিকাদার মোঃ আব্দুল মান্নান । তিন বছর মেয়াদে নির্মাণাধীন সেতুর ব্যয় ধরা হয়েছে ৭১ কোটি ৮৬ লাখ ১০ হাজর ১৪৩ টাকা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মহানন্দা নদী থেকে নিয়োমনীতি তোয়াক্কা না করে নির্মাণাধীন সেতুর পাশ ঘেঁষে ড্রেজার মেশিন দিয়ে ভূগর্ভ থেকে অবৈধভাবে বালু তোলা হচ্ছে। সেতুটির দুই প্রান্তে ভোলাহাট উপজেলার দলদলী ইউনিয়নের বারইপাড়া সড়ক ও গোমস্তাপুর উপজেলার বাঙ্গাবাড়ী সড়কে কোটি কোটি টাকার বালু উত্তোলন করে স্তুপ করা হচ্ছে। উত্তোলন করা বালু বাইরে বিক্রির করা হচ্ছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন। এছাড়াও অভিযোগ করে বলেন, সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করে সেতুটি নির্মাণ করছে আর ঠিকাদারসহ একটি চক্র নিজেদের লাভবান করতে বালু তুলে সেতুটিকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছেন। বালু তোলা বন্ধ করাসহ সেতুটি নির্মাণে অনিয়ম দুর্নীতি ক্ষতিয়ে দেখার দাবী তুলছেন সচেতন মহল।
বাংলাদেশ সরকারের বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন-২০১০ এর ধারা ৫ এর ১ উপধারা অনুযায়ী, পাম্প বা ড্রেজিং বা অন্য কোন মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ্য বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাবে না। ধারা-৪ এর (খ) অনুযায়ী সেতু, কালভার্ট, ড্যাম, ব্যারেজ, বাঁধ সড়ক, মহাসড়ক, বন, রেললাইন ও অন্য সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা নির্মাণ হলে অথবা আবাসিক এলাকা থেকে কমপক্ষে এক কিলোমিটারের মধ্যে বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ করেছে সরকার। কিন্তু ঠিকাদার এ আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বালু উত্তোলন অব্যহত রেখেছেন।

বালু উত্তোলনের বিষয়ে জানতে চাইল ঠিকাদার আব্দুল মান্নান বলেন, ‘জেলা প্রশাসক মিটিংয়ে আলোচনা করে সরকারি খাতে টাকা জমা দিয়ে ডিসি অনুমতি দিয়েছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারাও এসে পরিদর্শন করে দেখেছেন। কত দূর থেকে বালু তুললে ক্ষতি হবে না। সেই পরিমাণ দূরত্ব বজায় রেখে বালু তোলা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, জেলা প্রশাসকের সহযোগীতা নিয়ে আলোচান সাপেক্ষে সেতুর সংযোগ সড়কের কাজে ব্যবহারের জন্য বালু তোলা হচ্ছে। পূর্বে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে সরঞ্জাম জব্দ করার বিষয়ে তিনি বলেন, পূর্বে যে বালু উত্তোলন হচ্ছিল তা মৌখিক অনুমতির ভিত্তিতে ছিল। কাগজপত্র না থাকায় তখন মোবাইল কোর্ট সরঞ্জাম জব্দ করেছিল। এখন যা করা হচ্ছে তা সরকারি বিধান অনুযায়ী।
দলদলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোজাম্মেল হক চুটুকে মোবাইল কোর্টে জব্দকৃত মালামাল তাঁর জিম্মায় রাখা হয়েছিল। ঐসব মালামালের অবস্থা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঐসব মালামাল আছে আদালতের আদেশ অনুযায়ী হস্তান্তর করা হবে।
বালু উত্তোলনের অনুমতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এস. এম. আহসান হাবীব বলেন, ‘কোথা থেকে বালু উত্তোলন করা যাবে আর কোথা থেকে যাবে না এ নিয়ে জেলা বালুমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটিতে আলোচনা হয়েছে। তবে বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ আইন অনুযায়ী সেখান থেকে বালু উত্তোলন করতে পারবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এমন কোনো আইন নাই যে এক কিলোমিটার বা একশ মিটারের মধ্যে বালু উত্তোলন করা যাবে না। তাঁকে সংশ্লিষ্ট আইনের ধারা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হলে তিনি বলেন, যেখান থেকে বালু উঠাতে বলেছি সেখান থেকে উঠাচ্ছে কি না লোক পাঠিয়ে দেখবো।
এব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোঃ আব্দুস সামাদ বলেন, বিধি মোতাবেক আবেদন করেছিলেন। আমরা সরকারি নিয়ম নীতি অনুযায়ী অনুমতি দিয়েছি।
