ভোলাহাটে সামরত বেগমের কুঁড়ে ঘরে দুর্বিষহ জীবন

ভোলাহাট উপজেলা

স্টাফ রিপোর্টার:স্বামী ছেড়ে চলে গেছেন ৩৫ বছর আগে। ৩০ বছর থেকে বসবাস করনে একটি মাত্র কুঁড়ে ঘরে। নিজেই ভিক্ষা করে কোনো মতে খাবারের ব্যবস্থা করছেন। হটাৎ খাস জমিতে বসবাস করা বৃদ্ধার কুঁড়ে ঘর উচ্ছেদের আয়োজন করে বসেন পাশের জমির মালিক। এখন কোথায় যাবেন? কোথায় থাকবেন? এই চিন্তা ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধা সামরত বেগমের।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ভোলাহাট উপজেলার পুরাতন হাঁসপুকুর মাদ্রাসা পাড়া গ্রামের সামরত বেগমের ভাগ্যে কখনো মেলেনি সরকারি সুবিধা। ষাটোধ্ব বৃদ্ধার একেকটি দিন কাটে যেন চরম দুর্দশায়। কখনো খেয়ে বা না খেয়ে কাটছে তার দিন। ভিক্ষা করে পেটের ক্ষুধা নিবারণ করেন তিনি। জীবনের এই শেষবেলায় এখন তার একমাত্র ভরসা সৃষ্টিকর্তা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার পাশে একটি কুঁড়ে ঘরে থাকেন ও রান্না করেন। তিন দিকে টিন, টাটি ও এক দিকে পলেথিন দিয়ে ঘিরা একটি ঘর। ঘরের তিন দিকে করা আছে গর্ত। পাশের জমির মালিক ঘর উচ্ছেদ করার জন্য গর্ত করেছিলেন বলে জানা যায়। তাঁর পাশে আরেকটি ঘরে থাকেন ছোট বোন গোলেনুর বেগম (৪৫)। দীর্ঘদিন পূর্বে তাঁকে রেখে ইন্ডিয়া চলে যান তাঁর স্বামী।

গোলেনুর বেগম বলেন, ‘খাস জমিতে বাড়ি করেছিলাম। এখন পাশের জমির মালিক এসে উঠে যেত বলেছে। এগুলো নাকি তাঁর জমি। আমার তো ছেলে সন্তান নাই, বাড়ি ভেংগে কোথায় থাকবো কোথায় যাবো। টাটি গুলো ভেংগে দিয়েছিল।’

সামরত বেগম জানান, আমি কোনো সরকারি সুযোগ সুবিধা পাই না। একটা কার্ড করে চাইলে পাইনি। ঈদের সময় ১০ কেজি চালের কার্ডে কথা বললেও “মেম্বার দিব দিব বলে”, এখন পর্যন্ত দেয়নি। এখনো যেয়ে বলি একখান বিধবা কার্ড গ্যালা করে দাও, তখন “দিবগে দিবগে করছে আর থুয়ে (রেখে) দিচ্ছে”। হাঁটতে পারি না তাও গাঁয়ে ভিড়্গা করে খায়। মানুষ দয়া করে দিচ্ছে। সরকারের কাছে তিনি একটা সরকারি ভাতার কার্ড ও ঘর সাহায্য চেয়েছেন।

একজন প্রতিবেশি বলেন, ‘এর মত অসহায় হতদরিদ্র আর কেউ নেই। এই রকম মানুষ যদি সাহায্য সহযোগিতা না পায়, তাহলে কে পাবে? এখানে ঘর করে আছে, এখন পাশের জমির মালিক এসে বলছে, এগুলো রেকর্ড মাটি এখান থেকে উঠে যেতে হবে।’

শিক্ষক মোঃ এরফান আলী বলেন, ‘সকাল হলে জীবনজীবিকার জন্য বের হয়ে যায় গ্রাম অঞ্চলে, যা পায় তা দিয়ে সংসার চলে। কোনো জনপ্রতিনিধির দারা কোনো সাহায্য সহযোগিতা পাচ্ছে না। তাঁর বাসস্থান টাও নেয়, উঠানোর জন্য ঘরের সাইডে গর্ত করেছে।’ তিনি তাঁদের প্রতি সরকার ও জনপ্রতিনিধিদের সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন।

ভোলাহাট সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. পিয়ার জাহান বলেন, ‘সরকারি কোনো সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে কি না ইউপি সদস্যর কাছ থেকে জানবো। আর সরকারি বাড়িতে থাকতে চায়লে বাড়ির ব্যবস্থা করে দিবো।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *