ভোলাহাটে বন্ধ হয়ে গেছে স্কুল দিশেহারা শিশু শিক্ষার্থীরা

ভোলাহাট উপজেলা জাতীয় জেলা সংবাদ শিক্ষা

গোলাম কবির: ঢং ঢং ঢং করে আর ঘন্টা বাজে না। বই খাতা ঘাড়ে নিয়ে হৈ হুল্লোড় করে আর স্কুলে আসে না শিশু শিক্ষার্থীরা। নিথর দাঁড়িয়ে আছে স্কুল ঘর। শিশু শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা ছেড়ে খেলার মাঠে ছাগল চরাতে ব্যাস্ত । কেউ কেউ ছন্নছাড়া হয়ে দূরের স্কুলে গেলেও অনেকেই পড়ালেখা ছেড়ে পরিবারের গরু ছাগল চরানোসহ বিভিন্ন পেশায় কাজ শুরম্ন করেছে। নিম্ন আয়ের দিন মুজুর মানুষের পিছিয়ে পড়া আশ্রয়ন প্রকল্পের শিক্ষা বঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা অর্জনে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ২০২২ সালে নিমার্ণ করা হয় প্রাথমিক স্কুল।

পাঠদান শুরু হয় ২০২৩ সালে। স্কুলটি হাতের নাগালে হওয়ায় নিজ শিশুকে স্কুলটিতে শিক্ষা নিতে ভর্তি করেন দিনমজুর অভিভাবকেরা। প্রায় শতাধিক শিশু শিক্ষার্থী বেশ হাসি খুশিতে হৈ হুল্লোড় করে শিক্ষা অর্জন করে আসছিল। চার জন শিক্ষক শিক্ষিকা ৪টি কক্ষে দিতেন পাঠদান । কিন্তু ২০২৪ এর ৫ আগষ্ট সরকার পরিবর্তন হলে সুযোগ বুঝে ঐ রাতের অন্ধকারে হানা দেয় কিছু দূর্বৃত্ত। স্কুলের দরজা জানালা ভেঙ্গে বই খাতা চেয়ার টেবিল আলমারিসহ যাবতীয় আসবাবপত্র টেনে হেঁচড়ে স্কুল মাঠে ফেলে আগুন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে নিশ্চিহ্ন করে দেয়। এরপর থেকে বন্ধ হয়ে যায় শিশু শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা। এরপর থেকে শিশু শিক্ষার্থীরা কেউ পড়ালেখা করলেও অনেকেই পড়ালেখা ছেড়ে বিভিন্ন পেশায় যোগ দিয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ভোলাহাট উপজেলার চরধরমপুর টাঙগন নদীর মোহনায় নিম্ন আয়ের দিনমজুর এক’শ আশ্রয়ন প্রকল্পের সরকার বাড়ী করে দেয়। একটি মসজিদ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে হওয়ায় ঐ এলাকার এক’শ পরিবারের শিক্ষা বঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা অর্জনের সুবিধার জন্য একটি স্কুল নির্মাণ করা হয়। শিশুদের খেলার জন্য একটি খেলার মাঠ তৈরি করা হয়।

স্কুলটির পূর্বের অবস্থা।

সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, জুবায়ের ক্লাস টুতে পড়া লেখা করত। দূর্বৃত্তরা স্কুলের বই খাতাসহ যাবতীয় আসবাবপত্র পুড়িয়ে দেওয়ায় স্কুল বন্ধ হয়ে যায়। যার কারণে লেখা পড়া বাদ দিয়ে পরিবারের ছাগল চরার কাজ বেছে নিয়েছে। আহাদ ক্লাস ওয়ানে পড়ালেখা করত। স্কুল ভেঙে দেওয়ার পর পড়ালেখা ছেড়ে দিয়েছে। রকি দূরের স্কুলে ভর্তি হয়ে স্কুল যায়না। রাবিয়া ৪র্থ শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছিলেন কিন্তু দূরের স্কুল হওয়ার কারণে ঠিকমত স্কুলে যাচ্ছে না।

এক অবিভাবক বলেন, সরকার পরিবর্তনের পর দূর্বৃত্তরা রাতের অন্ধকারে স্কুলের বই খাতা আসবাবপত্র পুড়িয়ে দিয়েছিল। এসময় ছেলেমেয়েদের পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে দূরের স্কুলে যেতে হচ্ছে। স্কুল দূরে হওয়ায় বাচ্চারা স্কুলে ভালোভাবে যাচ্ছে না। সপ্তাহে দুই তিনদিন যাচ্ছে। এখন নদীতে পানি বাড়ছে নদীর পানি খালে প্রবেশ করাতে নৌকায় উঠে খাল পার হয়ে স্কুলে যেতে হয়। এতে নৌকায় পার হতে টাকা দিতে হয় আর শিশুদের পানিতে ডুবে যাওয়ার ভয় লাগে। এখন খুব সমস্যা হচ্ছে। তাঁরা স্কুলটা চালু করার জন্য দাবি করেছেন।

মোসা. রেজিনা বলেন, আমার একটা ছেলে আছে ক্লাস ফোরে পড়ালেখা করছে। এই প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে দূরের স্কুলে যেতে হচ্ছে। যাতায়াতে সমস্যা হচ্ছে। অনেক বাচ্চারা দূরের প্রতিষ্ঠানে যেতে চাচ্ছে না। অনেকে স্কুলে বের হয়ে বাগানে খেলা ধুলা করে বাড়ী ফিরে আসে। আলমাস হোসেন বলেন, ছেলে মেয়েরা পার্শ্ববর্তী স্কুলে যাচ্ছে। খালে পানি জমে যাওয়ার কারণে নৌকা দিয়ে পারাপার হতে প্রতিজনের প্রতিদিন ১০ টাকা করে নৌকা ভাড়া দিতে হয়।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোঃ সামিউল বলেন, বিদ্যালয়টি নির্মাণের শুরম্ন থেকে আমরা চারজন শিক্ষক মিলে বিনা পারিশ্রমিকে প্রায় দুই বছর ধরে শিক্ষাদান করেছি। কিন্তু গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার মাধ্যমে বিদ্যালয়টি ভাঙচুর করা হয়। তারপর থেকে ক্লাস কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে আছে। এখানকার শিশুরা এখন বাধ্য হয়ে দূরে গিয়ে পড়ালেখা করছে। যা তাদের জন্য অত্যন্ত কষ্টসাধ্য। আমরা চাই বিদ্যালয়টি দ্রুত সংস্কার করে চালু করা হোক। যাতে শিশুদের শিক্ষা জীবন আর ব্যাহত না হয়।

এ বিষয়ে উপজলো নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মনিরজ্জামান বলেন, পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *