নাচোলের হাসপাতালটি নিজেই রুগী

জাতীয় নাচোল উপজেলা সারা দেশ

মোঃ মনিরুল ইসলাম, নাচোল:ডাক্তার ও জনবলসহ নানা সংকটে নিজেই রোগী চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার ৫০শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি।

প্রায় ১০কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন বিল্ডিং এর অব্যবস্থাপনা ও চিকিৎসক ও জনবল সংকটের কারণে চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীদের। নতুনভাবে সরকারি বিল্ডিং পেলেও কাটিনি চিকিৎসক সংকট, কমেনি রোগীদের ভোগান্তি। লিফটবিহীন এ হাসপাতালে গর্ভবতী, বয়স্ক ও জটিল অসুস্থ রোগীদেরও সিঁড়ি বেয়ে উঠে ৩য় ও ৪র্থ তলায় ভর্তি হতে হয়। ৩য় ও ৪র্থ তলায় রোগী ভর্তি থাকেন কিন্তু নার্সদের দুটি স্টেশনে থাকার কথা থাকলেও শুধু ৩য় তলায় একটি স্থানে অবস্থান করেন বলে রোগীদের ভোগান্তি আরো বেড়ে যায়। নেই গর্ভবতী মহিলাদের বাচ্চা প্রসবের রুম। ৪র্থ তলায় একটি রোগীর রুমে পর্দার আড়ালে বাচ্চা প্রসব করনো হয় গর্ভবতী মায়েদের। এদিকে ভবনের নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহারে বিল্ডিংয়ের ছাদের উপর মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। বৈদ্যুতিক ও অন্যান্য সরঞ্জাম ব্যবহার করার কারণে অল্প সময়ের মধ্যেই ট্যাপ, ট্যাপের লাইন, বেসিন, বৈদ্যুতিক সুইচসহ নানা জটিলতা ইতিমধ্যেই নতুন ভবনে দেখা দিয়েছে। ডিউটিরত নার্সদের নেই সঠিক মাপের রুম কিংবা খাবার স্থানেও, নেই ইনচার্জেরও সঠিক মাপের রুম। এদিকে কিছুদিন থেকে টিএইচও না থাকায় মেডিকেল স্টাফদের বেতন ভাতাও বন্ধ রয়েছে বলে জানান স্টাফরা। এ নিয়ে বিরক্তবোধ করছেন নার্সেরাও। রান্না ঘরের পাশেই টয়লেটের ট্যাংকি উমড়ে মলগুলো বাইরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। মেডিকেলের ময়লা আবর্জনা ফেলার সঠিক জায়গাটিও ঠিক নেই। রোগীদের যে খাবার দেওয়া হয় সেগুলোর মান ভালো না এমন অভিযোগও রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক নার্স, তৃতীয়- চতুর্থ কর্মচারীসহ মোট পদ রয়েছে ১২৮টি। এর মধ্যে ৩৯টি পদ শুন্য রয়েছে। এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রথম শ্রেণীর বিভিন্ন ২৪ চিকিৎসকের মধ্যে কর্তব্যরত আছে ৯জন, শূন্য পদ রয়েছে ১৫জন, দ্বিতীয় শ্রেণীর ৩০ জনের মধ্যে ৩০ জনই কর্তব্যরত রয়েছে। তৃতীয় শ্রেণীর ৫৫ জনের মধ্যে কর্তব্যরত রয়েছে ৪০ জন। শুন্য পদ রয়েছে ১৫জন। চতুর্থ শ্রেণীর ১৯ জনের মধ্যে কর্তব্যরত রয়েছে ১০ জন। শুন্য পদ রয়েছে ৯জন। রুলস অনুযায়ী বিভিন্ন রোগের ১২জন ডাক্তার বরাদ্দ থাকলেও ২জন মেডিকেল অফিসার ও একজন আবাসিক মেডিকেল অফিসারসহ ৩জনে চলছে হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা। অন্যদিকে, বেড়েছে ডায়রিয়া ও সিজিন্যাল বিভিন্ন জ্বরের প্রকোপ। ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালটিতে প্রতিনিয়ত প্রায় ১১০ জন রোগী বারান্দাসহ বিভিন্ন স্থানে যত্রতত্র শুয়ে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করছেন।

এছাড়াও আউটডোরে প্রতিদিন প্রায় ৮০০ রোগী বিভিন্ন রোগের সেবা নিতে আসেন। এদিকে বিদ্যুৎ চলে গেলে পুরো হাসপাতাল অন্ধকার থাকে।  এ ভবনে এ্যানালগ এক্সরে মেশিন থাকলেও সেটি ভাল কাজ করেনা। আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন থাকলেও নেই ডাক্তার । ফলে রোগীদের ভোগান্তি বেড়েই চলেছে। জরুরী প্রয়োজনে সেবা না পেয়ে রোগীদের বেশি টাকা খরচ করে উপজেলা ও জেলা শহরের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে গিয়ে বিভিন্ন প্রকার পরীক্ষা নিরীক্ষা করাতে হচ্ছে এতে করে রোগীদের গুনতে হচ্ছে বাড়তি অর্থ। জেনারেটর সুবিধা থাকলেও নেই জুনিয়র মেকানিক, অপারেশন থিয়েটার থাকলেও নেই সার্জারি ডাক্তার কিংবা এনেস্থেসিয়া স্পেশালিস্ট। অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার বারেকের নামে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ থাকলেও  বারেক বলছেন ভিন্ন কথা। তিনি বলছেন  গত জুনে সরকারিভাবে বরাদ্দ না থাকায় গাড়ি চালানো বন্ধ হয়ে যায়। জুন পর্যন্ত প্রেট্রলপাম্পে তেলের প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা বকিয়া রয়েছে। যার কারণে বাকিতে তেল পাওয়া যায় না। কয়েকদিন পর অসুস্থ রোগীদের কথা ভেবে, আমি এবং টিএইচও স্যার, ইউএনও স্যারের সাথে কথা হয়, রোগীদের কাছ থেকে ২২ লিটার তেল অথবা সমপরিমাণ দামের টাকা নিয়ে রাজশাহী যাতায়াত করতে অনুমতি দেন। সেই মোতাবেক সাড়ে ২হাজার ৭শত টাকা নেওয়া হয়। আমি রোগীদের উপকার করি। বাড়তি কোন টাকা নেয়না। বরং এখনো আমি এ্যাম্বুলেন্স মেন্টেন্সের আনুসংগীক খরচবাবত প্রায় ৭০ হাজার টাকা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্তৃপক্ষের কাছেই পাবো। নাহলে আমার অভিযোগের বিষয়ে আপনার টিএইচও এবং ইউএনও’র কাছে জেনে নিতে পারেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক হাসপাতালের কর্মচারী বলেন, হাসপাতালে বিভিন্ন সময়ে বহিরাগত লোক হাসপাতালের ওয়ার্ডে ভাড়া দিয়ে দিনের পর দিন অবস্থান করেন। এমনকি হাসপাতালে দুইটি বাউন্ডারি ওয়াল ভেঙে আছে।

সেই স্থান দিয়ে বহিরাগতদের আনাগোনার কথা শোনা যায়। এতে করে মেডিকেলের ভেতরে, যেকোন সময় অঘটনের সংখা রয়েছে।

লিফট ব্যবস্থাপনা, চিকিৎসক সংকটসহ বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে জানতে চাইলে সিভিল সার্জন এ.কে.এম. শাহাবুদ্দিন জানান, চিকিৎসক সংকট ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় চাহিদা নিয়ে উপর মহলের কাছে চিঠি দেয়া আছে।

স্টাফদের বেতন ভাতা বকিয়া বেতনের বিষয়ে বলেন , এখন নতুন টিএইচও যোগদান করেছেন, তিনি বিষয়টি দেখবেন। তিনি বিল্ডিং এর ব্যাপারে জানান, লিফটের ব্যাপারে আমার বিভাগীয় স্বাস্থ্য প্রকৌশলীর সাথে কথা হয়েছে। ১০০সজ্জা বিশিষ্ট হাসপাতালের লিফটের কাজ শেষ হলেই ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের লিফটের ব্যবস্থা করা হবে। হাসপাতালের বিভিন্ন সুবিধা, অসুবিধা সংকট নিয়ে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার আব্দুস সামাদ জানান, ইচ্ছাশক্তি থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র চিকিৎসক সংকটের কারণে ভালোমতো চিকিৎসা সেবা দিতে পারছি না। তাছাড়া ডায়রিয়া ও জ্বরের প্রকোপ বাড়ার কারণে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় তিনজন ডাক্তার ও চারজন এস.এস.এম.ও (সেকমো) ডাক্তার দিয়ে চিকিৎসা দিতে আমরা হিমশিম খাচ্ছি। এছাড়াও আউটডোরে প্রায় ২৩ প্রকারের ওষুধ ও ইনডোরে প্রায় ২০রকমের ঔষধ রোগীদের আমরা দিতে পারছি ঠিকই, তবে তা ক্রমবর্ধমান রোগীর জন্য যথেষ্ট নয়। অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভারের বেশি ভাড়া আদায় ও বাউন্ডারি ওয়াল ভেঙে থাকার বিষয়ে তিনি জানান, ওয়াল ভেঙে বহিরাগতদের প্রবেশ ও এ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার বারেকের বিরুদ্ধেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়েরও অভিযোগ পেয়েছি। আমরা উর্দ্ধতন কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানাবো এবং এ ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করব।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *