স্টাফ রিপোর্টার: দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর ভূমি অফিস। সাধারণ মানুষের জমির যাবতীয় কাগজপত্র সংরক্ষণ করা হয় এ অফিসে। ভূমি অফিসের যেমন সর্বাধিক গুরুত্ব রয়েছে ঠিক তেমনি সর্বাধিক ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগও রয়েছে। গত ৫ আগষ্ট আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভূমি অফিসের ঘুষ বাণিজ্য প্রতিরোধে ব্যাপক ঝড় উঠে। কিন্তু তারপরও ভূমি অফিসগুলোতে থেমে নেই ঘুষ বাণিজ্য।
সরজমিনে গিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ভোলাহাট উপজেলার ভোলাহাট সদর, গোহালবাড়ী, দলদলী ও জামবাড়ীয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসগুলোতে অবৈধ ভাবে লোক নিয়োগ দিয়ে ঘুষ বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন সহকারী ভূমি কর্মকর্তারা। এমন দৃশ্য দেখা যায় অফিসগুলোতে। অফিস ছুটির দিন শনিবার বিদ্যুৎ থাকবে না সকাল সাড়ে আটটা থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত ঘোষণা পল্লী বিদ্যুতের। কিন্তু এদিন সরজমিনে গিয়ে ভোলাহাট সদর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে জেনারেটর চালিয়ে সহকারী ভূমি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম ও তাঁর মনগড়া অবৈধ নিয়োগ দেয়া বহিরাগত শিবগঞ্জ উপজেলার কামালপুর গ্রামের সজিবসহ কিছু সেবা গ্রহীতাকে অফিসে কাজ করতে দেখা যায়।
এসময় সেবা গ্রহীতা খাড়োবাটরা গ্রামের মো. আব্দুল মান্নান, সহকারী ভূমি কর্মকর্তার উপস্থিতিতে অভিযোগ করে বলেন, জমির দলীল কাগজপত্র থাকার পরও ৭ জনকে জাল কাগজপত্রে ৭ বার খারিজ করে দিয়েছে অথচ প্রকৃত জমির মালিককে খারিজ দেয়নি। এসব ব্যাপারে আমি অফিসে এসেছি। এদিকে বাসস্ট্যান্ডের একজন দোকানদার তোতা অভিযোগ করে বলেন, আমার বাপ-চাচারা চার ভাই। টাকার বিনিময়ে দু’ভাইয়ের জমি খারিজ করে দিয়েছেন। আর আমাদের খারিজের আবেদন নথিজাত করে খারিজ করে দিচ্ছে না।
সেবা গ্রহীতারা অভিযোগ করে বলেন, বহিরাগত অন্য উপজেলার ব্যক্তিকে অবৈধ ভাবে নিয়োগ দিয়ে সেবা গ্রহীতাদের কাছ থেকে অবৈধ অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা। এছাড়া জমির মালিক সরাসরি সেবা নিতে পারেন না। সহকারী ভূমি কর্মকর্তার নিজস্ব কিছু কথিত মহরিল দিয়ে খারিজ, খাজনা দেয়াসহ বিভিন্ন কাজ করে থাকেন। অবৈধ ভাবে নিয়োগপ্রাপ্তদের কাছে অফিসের কাগজপত্র ও অফিসয়াল গোপন তথ্য কতটা নিরাপদ থাকবে তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন সচেতন মহল।
এদিকে কম্পিউটার ডেস্কে যে ব্যক্তি কাজ করেন তাকে মাসিক বেতন কি ভাবে দেয়া হয় এর কোন সদুত্তর না দিয়ে সাংবাদিকদের উপরে উত্তেজিত হয়ে উঠেন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম। ভূমি কর্মকর্তা এ ব্যক্তিকে মাঝে মাঝে ডেকে কাজ করিয়ে নেয়ার কথা বললেও বহিরাগত এ ব্যক্তি বলেন, তৎকালীন সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মেহেদী হাসানের সময় ২০২১ সাল থেকে ভূমি অফিসে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কাজ করছেন বলে জানান। বেতন ভাতার বিষয়ে জানতে চাইলে কম্পিউটার ডেস্কে কাজ ছেড়ে অফিসের বাইরে চলে যান বহিরাগত অবৈধ নিয়োগ প্রাপ্ত এ ব্যক্তি।
গোহালবাড়ি ইউনিয়ন ভূমি অফিসে গিয়ে দেখা যায়, কম্পিউটার অপারেট হিসেবে বজরাটেক গ্রামের সিদ্দিক ও জমিজমার নথিপত্র দেখার দায়িত্বে রেখেছেন গোহালবাড়ি গ্রামের আবু বক্কর। গুরত্বপূর্ণ কাগজপত্র সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে ভূমি অফিসে। কোন কারণে কাগজপত্র যদি হারিয়ে যায় বা ক্ষতি করে ফেলে অবৈধ ভাবে নিয়োগ দেয়া বহিরাগত ব্যক্তিরা তবে সরকার তাদের কি ভাবে ধরবে? এছাড়া কিসের বিনিময়ে এখানে থাকছেন তারা? এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি সংশিষ্ট কর্মকর্তা। এদিকে গোহালবাড়ী ভূমি অফিসের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা মো. পারভেজের ভাই সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা হওয়ায় ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে যে ভাবে পারছেন সেভাবেই চালিয়ে যাচ্ছেন অফিস। তিনি বলেন, বাহির থেকে যারা কাজ করছে তাদের সেবা নিতে আসা ব্যক্তিরা ১০/২০ টাকা খুশী হয়ে দেয়।
দলদলী ইউনিয়নের ভূমি অফিসে গেলে সাংবাদিক আসার খবর পেয়ে অবৈধ নিয়োগ প্রাপ্ত বহিরাগতরা সটকে পড়ে। অফিসে বহিরাগত কেউ কাজ করেননা বলে জানান দলদলী ইউনিয়নের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম। তবে স্থানীয়রা জানান, ভূমি অফিসে পার্শবর্তী গোমস্তাপুর উপজেলার রহপুরের একজন এবং দলদলী গ্রামের মুনিরুল ইসলামের ছেলে আমিনুল ইসলাম কাজ করেন। তাঁর কোন বৈধ নিয়োগ নাই।
জামবাড়ীয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসে সরকারের নিয়োগ প্রাপ্ত ২ জনকে অফিসিয়াল কাজ করতে দেখা গেছে। ইউনিয়ন ভূমি সহকারী নুরুল ইসলাম জানান, আমার এখানে বাইরের কেউ থাকে না। আমরা দুই জন অফিসের সকল কাজ করি। সরকারি ভাবে নিয়োগ ছাড়া বাইরের কাউকে রাখার কোন নিয়ম নাই বলে জানান তিনি।
এসব বহিরাগতরা ইউনিয়ন ভূমি অফিসে বছরের পর বছর কাজ করছে। এতে অফিসগুলো কতটুকু নিরাপদ ভাবছেন? এবং তাদের বেতন কিভাবে দেয়া হয় প্রশ্ন করা হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিদা আক্তার বলেন, নিয়োগপ্রাপ্ত ছাড়া অন্য কেউ কাজ করে কি না আমার জানা নাই। বাইরের কেউ থাকার কোন বৈধতা নেই। নামজারি করতে অতিরিক্ত টাকা নিলে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহন করা হবে।