স্টাফ রিপোর্টার: ভোলাহাট (চাঁপাইনবাবগঞ্জ)প্রতিনিধি: চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ভোলাহাট উপজেলার বীরশ্বরপুর জামে মসজিদ উপজেলার একটি প্রাচীনতম মসজিদ। এলাকার অন্য মসজিদের তুলনায় অর্থ সম্পদ রেয়েছে অনেক বেশি। এলাকার প্রায় ৭শত ১০টি পরিবারের ৫ হাজার জন মানুষ জামাতবদ্ধ হয়ে বসবাস করেন। মসজিদটি পরিচালনা কমিটির মাধ্যমে পরিচালিত হয়। কমিটিতে যে যখন এসেছেন মসজিদের ধানের জমি, আম বাগান, দানের অর্থ সম্পদ নিজের ইচ্ছা মত ব্যবহার করেছেন। কোনো নিয়ম না মেনে মসজিদের জমি বিক্রি, আবাদি জমি পছন্দের লোককে লিজ দেওয়া ও আম ফল গোপনে বিক্রি করে টাকা আত¥সাৎ করার অভিযোগ কমিটির নেতাদের উপরে। বিষয়টি নিরসনের জন্য ইউএনওর শরণাপন্ন হয়েও হয়নি প্রতিকার।
মসজিদটি ১৯৯৮ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত দুই কমিটির মাধ্যমে পরিচালিত হয়েছে। ১৯৯৮ সাল থেকে ২০০৮ সালের মে মাস পর্যন্ত মোঃ ইদ্রিস আলীর কমিটি মসজিদটি পরিচালনা করেছেন। পরবর্তীতে মে মাসের ২ তারিখ থেকে ২০২৪ সালের আগষ্ট মাস পর্যন্ত মসজিদটি পরিচালনা করেন মো. আফতাব উদ্দিনের নিয়ন্ত্রিত কমিটি।
মসজিদের রেজুলেশনে দেখা গেছে, ৫ বছর মেয়াদি কমিটির মেয়াদ শেষ হলে এলাকাবাসীর কোনো মতামত ছাড়ায় মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া কমিটির সদস্যদের প্রস্তাব সমর্থনে নতুন কমিটি গঠন করে। কমিটির মেয়াদ ৫ বছর থেকে বৃদ্ধি করে ৭ বছর করা হয়। এভাবেই মো. আফতাব উদ্দিনের নিয়ন্ত্রিত কমিটির সদস্যরা নিজেরা কমিটি গঠন করে চলতে থাকে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, পরিচালনা কমিটি লুটপাট করেছেন কোটি কোটি টাকা। ১৯৯৮ সালে মসজিদ প্রশস্ত করার কথা বলে মসজিদ কমিটির তৎকালীন সেক্রেটারি মোঃ ইদ্রিস আলী জামায়াতের সাধারণ মানুষের মতামত ছাড়াই দায়সারা রেজুলেশন করে নিজে মসজিদের পক্ষে দাতা সেজে গোহালবাড়ী মৌজার ১৩টি দাগের মোট ৬ একর সাড়ে ১৮ শতাংশ জমি মাত্র ৯০ হাজার টাকায় বীরেশ্বরপুর সালেমীয়া মাহদীয়া কওমী মাদ্রাসার নামে বিক্রি করেন। কিন্তু সেসময় জমির দাম প্রায় ৫লাখ টাকার উপরে হওয়ার কথা ছিল । মাদ্রাসা কমিটিতেও তিনি ছিলেন সেক্রেটারি। সেই কারণে জমি গ্রহিতা হয়েছেন মাদ্রাসা কমিটির সহ-সভাপতি। এ নিয়েও ক্ষোভ রয়েছে এলাকায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা অভিযোগ করেন এসব জমির বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৮/৯ লাখ টাকা বিঘা। সেখানে ১৯ বিঘা জমির মূল্য মাত্র ৯০ হাজার টাকা। ২০০২ সালে মসজিদের উন্নয়নের জন্য ৬টি দাগের ১শত সাড়ে ৯ শতক ও ২০০৭ সালে বিক্রি করে ২৮ শতক জমি। জমি বিক্রির রেজুলেশনে দেখা গেছে, তিনি মসজিদ সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসীর কোনো মতামত গ্রহণ করেননি। জমি বিক্রয় উপ কমিটি বা দর দাম না করে নামকাওয়াস্তে বিক্রি করেন।
মোঃ ইদ্রিস আলীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জমি বিক্রয়ের বিষয়টি স্বীকার করেন। কত মূল্যে, কী কাজে জমি বিক্রি করা হয়েছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সেসময় জমির দাম কম ছিল, জমি বিক্রির টাকা মসজিদ প্রশস্ত করণ ও উন্নয়নের জন্য ব্যয় হয়েছে।’ তবে ক্যাশ খাতা দেখতে চাইলে, কোথায় আছে জানাতে পারেননি। সাধারণ এলাকাবাসীর মতামত ছাড়াই পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্তে জমি বিক্রি করা হয়েছে বলে জানান।
এদিকে মোঃ ইব্রাহীম সর্দার মসজিদের অর্থ গর্মিল করায় মসজিদকে ৩ বিঘা জমি মসজিদকে লিখে দেন ২০ বছর পূর্বে। রেজিস্ট্রেশনের পর মসজিদ ভোগদখল করে আসছিল। কিন্তু দাগ খতিয়ান ভুল করে রেজিষ্ট্রেশন করে দেয়ায় ৫ আগষ্টের পর তার ভাতিজারা জমি দখলে নিয়ে নেন বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন।
আরো জানা যায়, ১৫ বছর ধরে মো. আফতাব উদ্দিন দলীয় ক্ষমতাবলে নিজের পছন্দ মত কমিটি গঠন করে মসজিদ পরিচালনা করতেন। মসজিদের ধানের জমি, আম বাগান, দানের অর্থ সম্পদ নিজের ইচ্ছা মত ব্যবহার করেছেন। কোনো নিয়ম না মেনে মসজিদের জায়গা জমি পছন্দের লোককে লিজ দিতেন ও আম ফল গোপনে বিক্রি করে টাকা আত্মসাৎ করতেন। আওয়ামী লীগের ক্ষমতাবলে ১৫ বছর ধরে মসজিদের সকল অর্থ সম্পদ কুক্ষিগত করে ছিলেন। রাজনৈতিক মামলা দিয়ে হয়রানির ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারতেন না।
স্থানীয় মুসল্লিরা জানান, তাঁর মুখের কথায় ছিল আইন। তাঁর বিরম্নদ্ধ কেউ কিছু বলার সাহস করতো না। মসজিদের জায়গা জোর পূর্বক দখল করে গরু খামার করার অভিযোগ করেন স্থানীয়রা।
৮ আগষ্ট পূর্বের কমিটি বিলুপ্ত করে ১২ আগষ্ট মো. ইদ্রিস আলীকে সভাপতি ও মো. শফিকুল ইসলামকে সেক্রেটারি করে পূণাঙ্গ কমিটি গঠন করেন। কিন্তু মো. আফাতাব উদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে কমিটিতে থাকা অবস্থায় লুটপাট করেছেন ৫২ লাখ টাকা এমন অভিযোগ বর্তমান কমিটির সদস্য ও এলাকাবাসীর। এব্যাপারে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর প্রতিকার চেয়ে অভিযোগ করেন তাঁরা।
মসজিদ পরিচালনা কমিটির সেক্রেটারি মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, বীরশ্বরপুর বড় জামে মসজিদের সাবেক সেক্রেটারি আফতাব উদ্দিন ১৫ বছর মসজিদ কমিটি অবৈধ ভাবে কুক্ষিগত করে প্রায় ৫০ লাখ টাকা আত্মসৎ করেন।
সাবেক সেক্রেটারি মো: আফতাব উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এখনো পূর্বের কমিটির মেয়াদ আছে। আমার ব্যক্তিগত কারণে পূর্বের কমিটির কাছে পদত্যাগ করেছি। আমার বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ সম্পন্ন মিথ্যা বানোয়াট। যেটা আয় ব্যয় করেছি সবগুলোর হিসাব ঠিক আছে। কমিটির সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে আয় ব্যয় করা হয়েছে। আমি ৯ লাখ টাকা উদ্বৃত্ত রেখে পদত্যাগ করেছি।
মসজিদের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ঐ এলাকায় ব্যাপক চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। বিষয়গুলো সমাধান না হলে আইন শৃঙ্খলার অবনতির আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল।
