এম এইচ হায়দার আলী :চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর ইউনিয়নের বংপুরে বৃদ্ধি পেয়েছে বিভিন্ন মাদকদ্রব্য সেবন ও বিক্রির প্রবণতা। এমন অভিযোগ জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয় একাধিক বাসিন্দাদের। উপজেলার প্রতিটি এলাকার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ার কারণে দ্রুতই মাদক কারবারীরা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে মাদকদ্রব্য বহন ও সরবরাহ করছেন। আর মাদক সহজে পাওয়ায় অনেকে কৌতূহলবশত না বুঝে মরণফাঁদ নামক মাদকের নীল ছোবলে যুক্ত হচ্ছেন। ফলে যুব সমাজ নিয়ে চরম উদ্বিগ্নের মধ্যে রয়েছেন অভিভাবকরা।
পুলিশ প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে আবার কাউকে ম্যানেজ করে দলীয় ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় এক শ্রেণির অসাধু ব্যক্তি পুরো উপজেলাকে ঠেলে দিচ্ছে মাদকের অন্ধকার জগতে। বর্তমানে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গাঁজা, দেশি মদ, তাড়ি, পাওয়া যাচ্ছে। তবে গাঁজা ও তাড়ির বিস্তার আশঙ্কাজনকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। মাঝে মধ্যে পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসন চিহ্নিত কিছু মাদক কারবারিদের আটক করে জেলে দিলেও আইনের ফাঁক দিয়ে স্বল্প সময়ের মধ্যে বেরিয়ে এসে আবার দেদারসে শুরু করে মাদকের কারবার। চিহ্নিত মাদক কারবারিদের ও মাদক সম্রাটদের আইনের আওতায় এনে দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল।
আবার মাদকের সঙ্গে একাধিক রকমের জুয়াসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডও বেড়েছে বলে অভিযোগ করেছেন কেউ কেউ। এলাকার স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীসহ যুবসমাজ মাদকাসক্ত হয়ে এবং জুয়ায় টাকা হেরে চুরি, ছিনতাই সহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছেন। অনেকেই মাদকের কারবার করে হঠাৎ করেই আঙুল ফুলে কলাগাছে পরিণত হওয়ার কারণে স্থানীয়রা তাদের ভয়ে কোনো প্রতিবাদও করতে পারে না।
উপজেলার বংপুর, মচকৈইল,নওদা মিশন, ও মহেশপুরের কয়েকজন যুবক জানিয়েছেন, হঠাৎ করে মাদকের বিক্রি ও সেবন বৃদ্ধি পেয়েছে। কেউ কেউ কৌশল পাল্টে স্থান পরিবর্তন করে অনায়াসে মাদক বিক্রি করছে। আর এ কারণে বৃদ্ধি পেয়েছে মাদকসেবীর সংখ্যা। তবে জুয়া তেমন চলে না জানিয়ে তারা জানান, মাঝে মাঝে কোনো গোপন জায়গায় খেলে। আর লুডুর জুয়া তো এখন ওপেন সিক্রেট।
ওই এলাকায় পুলিশ পৌঁছলে তারা একে অপরের মাধ্যমে খবর দিয়ে দেয়। তবে সেটা বন্ধ হলেও গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় মাঝে মাঝে চলে কেরাম বোর্ড লুডু জুয়া খেলা। বংপুর ও মচকৈইল এলাকায় অনায়াসে চলছে গাঁজা বিক্রি। এমন অভিযোগ এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তির।
উপজেলার বংপুর গ্রামের এক বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, বেশ কিছুদিন যাবৎ বংপুর এলাকাটি অনেকটাই মাদকমুক্ত ছিল। কিন্তু সম্প্রতি চিহ্নিত মাদক কারবারি মোসাঃ রোকসানা বেগম জং মুসলিম উদ্দিন কালু , তোফিজুল ইসলাম তোফিলের স্ত্রী আমেনা বেগম, তারেক ও তার স্ত্রী মার্জিনা পুনরায় মাদকের রমরমা ব্যবসা শুরু করেছে। কোনো কিছু বলতে গেলেই পুলিশের ভয় ও হয়রানিমূলক মামলার ভয় দেখায়। হাতের কাছে পাওয়ায় মাদকের নীল নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ছে তরুণ ও যুব সমাজ। সন্তানরা বড় হয়ে গেলে আর কত চোখে চোখে রাখা সম্ভব হয়ে ওঠ? অথচ পুলিশ বাহিনী ইচ্ছে করলেই নিমিষের মধ্যে এলাকা থেকে মাদকের দৌরাত্ম্য কমাতে পারে।
বংপুর এলাকার এক মাদককারবারি পরিচয় গোপন রেখে এ প্রতিবেদককে বলেন, মাদকদ্রব্যের চলাচলের পথ রোধ না করা পর্যন্ত মাদকের বিস্তার প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। যারা প্রভাবশালী এবং যারা থানা পুলিশকে মাসোহারা দিয়ে আসছে তারা প্রকাশ্যে মাদকের রমরমা ব্যবসা করলেও পুলিশ তাদেরকে দেখতে পায় না। অথচ পুলিশ চাইলেই উপজেলাকে মাদকমুক্ত করতে শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারে।রহনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহরাবের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, উপজেলার মধ্যে রহনপুর ইউনিয়ন মাদকের হটস্পটে পরিণত হয়েছে। ইদানীং এই ইউনিয়নের অধিকাংশ স্থানই মাদক বিস্তারের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। প্রকাশ্যে বিভিন্ন এলাকায় মাদকদ্রব্য বিক্রি হয়। বিশেষ করে গাঁজা বেশি বিক্রি হয়।
তিনি একটু ক্ষোভ নিয়েই বলেন, উপজেলার প্রতিটি আইনশৃঙ্খলা মিটিং-এ মাদক নিয়ে কথা বলেছি। কোনো লাভ হয় না। তাই মাদক নিয়ে আর কোনো কথা বলতে চাই না। কিন্তু যখন দেখি ইউনিয়নের তরুণ-যুবকরা চোখের সামনে মাদকের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে, তখন খুব কষ্ট হয়, খুব খারাপ লাগে। অনেকবার মাদকের বিস্তাররোধে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও তা বাস্তবায়ন করার মতো কোনো সহযোগিতা না পাওয়ার কারণে পিছু হটতে বাধ্য হয়েছি।
গোমস্তাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খায়রুল বাসার বলেন, এই বিষয়টি দেখতেছি। থানা পুলিশ সব সময় মাদকের বিরুদ্ধে। আমরা প্রতিনিয়তই মাদকের বিস্তার রোধে জড়িতদের আটক করছি এবং আইনগত ব্যবস্থাও গ্রহণ করছি। এই উপজেলায় মাদকের বিস্তারকে জিরো টলারেন্সে আনতে আমরা পুলিশ বদ্ধপরিকর। মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে এবং চলবে।