ভোলাহাটে চেয়ারম্যানের নোটিশে সহস্রাধিক বিঘা জমির ফসল উৎপাদন অনিশ্চিতের পথে

কৃষি ভোলাহাট উপজেলা সারা দেশ

কৃষি নির্ভর দেশে সরকার যখন ফসল উৎপাদনে নানা ভাবে কৃষকদের উৎসাহিত করছে। ঠিক এমন সময় খোদ সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে সেচ কাজে প্লাষ্টিক পাইপের ড্রেন মাটির নিচ থেকে  তুলে ফেলার নোটিশ দিয়েছেন দলদলী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক চুটু। এ পদক্ষেপে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ভোলাহাট উপজেলার দলদলী ইউনিয়নের মোহম্মদপুর চিলার বিল, রাঙাম্যাইটার হাজার বিঘা জমির ধান , সবজি ও মৎস্য চাষ উৎপাদন অনিশ্চিত হয়ে পড়বে । এতে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন সেচ সুবিধা বঞ্চিত এলাকার কৃষকেরা।

দলদলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে চেয়ারম্যানের ড্রেন তুলে ফেলার হুমকি দিয়ে নোটিশের প্রতিবাদে ঘন্টা ব্যাপী মানববন্ধন করেন স্থানীয় কৃষক ও এলাকাবাসী।

Oplus_131072

মানববন্ধনে স্থানীয় কৃষক মোঃ সালাউদ্দিন, মোঃ আব্দুর রহমান, মোঃ তরিকুল ইসলাম, মোঃ হাবিবুল্লাহ, মোঃ আব্দুল লতিফসহ অন্যান্যরা তাদের বক্তব্যে বলেন, দিন দিন পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় সরকার যখন ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনে চাপ কমাতে ভূ-উপরস্থ পানি দিয়ে ফসল উৎপাদনে উৎসাহিত করছে কৃষককে। ঠিক এমন সময় চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ভোলাহাট উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাহমিনা আক্তারের নির্দেশে দলদলী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে দিয়ে দলদলী গ্রামে মহানন্দা নদী থেকে ভূ-উপরস্থ পানি উত্তোলনের সেচ কাজে বাধা সৃষ্টি করতে নোটিশ পাঠিয়েছেন।

এ সময় স্থানীয় কৃষকেরা আরো অভিযোগ করে বলেন, মহানন্দা নদীর পানি দিয়ে মোহম্মদপুর মৌজার প্রায় হাজার হাজার বিঘা জমিতে ধান উৎপাদন হবে। ২/৩ ‘শ  বিঘা আমবাগান সেচ সুবিধা পাবে। মৎস্য চাষ হবে। দিন দিন ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় গভীর নলকূপ স্থাপনে আস্থা হারিয়ে যাচ্ছে কৃষকের । ফলে ভূ-উপরস্থ মহানন্দা নদীর পানি দিয়ে ফসল ফলাতে দলদলী গ্রামের মৃত আকবর আলির ছেলে মোঃ আব্দুল করিমের প্রকল্পটি সম্প্রসারণ করে প্রায় ৫/৬’শ ফিট প্লাস্টিক পাইপ দিয়ে ড্রেন মাটির নিচ দিয়ে ধান ক্ষেতের মাঠে নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেন কৃষক। তাদের অনুরোধে একটি সরকারি সোলিং রাস্তার পাশ দিয়ে ৩/৪ ফিট গর্ত করে প্লাস্টিক পাইপ দিয়ে ড্রেন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় কৃষক।  সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৪২জন কৃষকের স্বাক্ষরীত ড্রেন নির্মাণের অনুমতি চেয়ে ৮ জুলাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিদা আক্তার বরাবর একটি আবেদন করেন কৃষক। আবেদন করলেও কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায়  সেচ সুবিধা পেতে এলাকার কৃষকগণ প্লাস্টিক পাইপের ড্রেন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়ে ড্রেন নির্মাণ করে ফেলেন। এবং সাথে সাথে রাস্তা মেরামত করে ফেলেন কৃষকগণ। এমন সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ১৮ সেপ্টেম্বর ঘটনাস্থলে গিয়ে এক্সকেভেটর মেশিন ও ৫০টি প্লাস্টিক পাইপ স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ মোজাম্মেল হক চুটুর উপস্থিতে গ্রামপুলিশের জিম্মায় রেখে আসেন এবং মামলাসহ  বিভিন্ন ধরণের ক্ষয়ক্ষতি করার হুমকি দিয়ে আসছেন।

Oplus_131072

পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে স্থানীয় চেয়ারম্যান মোঃ মোজাম্মেল হক চুটু ২১সেপ্টেম্বর ঘটনাস্থলে গিয়ে কৃষকদের ড্রেন নির্মাণ বন্ধসহ অবৈধ ভাবে আটকে রাখা এক্সকেভেটর ও প্লাস্টিক পাইপ ইউএনওর নিয়ন্ত্রণে  থাকার কথা বলেন এবং ইউএনও মামলা করবে বলে হুমকি দেন। এ সময় তীব্র প্রতিবাদ করেন উপস্থিত কৃষকেরা চেয়ারম্যানের কথা শুনে । কৃষকেরা বলেন, ড্রেন নির্মাণে হাজার হাজার বিঘা জমিতে বার্ষিক ধান ৩৫/৪০ হাজার মণ, ৭০/৮০ হাজার মণ সবজি এবং আম বাগান প্রায় ২/৩’শ বিঘায় ফসল উৎপাদন ও মৎস্য চাষ হবে । এ সময় কৃষকের তোপের মুখে পড়েন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান। পরে ২৫ সেপ্টেম্বর ইউএনও অফিসে গিয়ে কৃষকদের দেখা করে তাদের দাবীর কথা বলার পরামর্শ দেন। চেয়ারম্যানের পরামর্শে দেড়শতাধিক কৃষক ইউএনও’র সাথে দেখা করতে গেলে তাদের সাথে দেখা করননি। বিশাল কৃষক জনগোষ্ঠীর কৃষি কাজে সহায়তা করতে বেশ কয়েক দফা বিভিন্নমহল থেকে সুপারিশ করলেও কোন পাত্তাই দেননি ইউএনও। উল্লেখ্য সরকার বরেন্দ্র অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির চাপ কমাতে কোটি কোটি টাকা খরচ করে কৃষকের সেচ সুবিধার জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহানন্দা নদীতে রাবার ড্যাম স্থাপন করেছে।  ঠিক এমন সময় খদ সরকারের প্রতিনিধি উন্নয়ন কাজে বাধা সৃষ্টি করায় কৃষকমহলের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অবশেষে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান একটি নোটিশ দিয়ে রাস্তা মেরামতের কথা বলেও দেড় মাস পূর্বেই রাস্তা মেরামতের কাজ সম্পন্ন করা হয়। এরপরও রহস্য জনক কারণে ইউএনও কৃষকের সেচ সুবিধা বঞ্চিত করে ড্রেন্টির পাইপ তুলে ফেলার জন্য ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে দিয়ে পুনরায় নোটিশ প্রদান করেন।

এব্যাপারে দলদলী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ মোজাম্মেল হক চুটু বলেছেন, এক ভাবে সেচ কাজ করতে দেয়া যাবে না। এলাকার কৃষকেরা যদি সেচ কাজ পরিচালনা করে তবে করতে পারবে বলে জানান।

এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহামিদা আক্তারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে দেখবো। কৃষকেরা যদি চাই তবে আমি দেখবো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *